বাউফলে ২ শতাধিক নদী ও খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে

বাউফলে ২ শতাধিক নদী ও খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে

 

সাইফুল ইসলাম, বাউফল :  গ্রামাঞ্চলের অপরূপ সৌন্দর্য খাল ও নদী। নদী ও খাল ভরাট হওয়ায় গ্রামাঞ্চলের বৈচিত্র হারিয়ে যাচ্ছে। ছোট হয়ে আসছে গ্রাম। বাড়ছে বসতবাড়ি। নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কৃষির ওপরে। ভেঙ্গে পড়েছে অর্থনৈতিক কাঠামো।
সরেজমিনে দেখা গেছে,বাউফল উপজেলার ছোট-বড় ২ শতাধিক নদী ও খাল ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। খাল কাটা কর্মসূচী বাস্তবায়নের নামে বিভিন্ন সময়ে বরাদ্ধকৃত অর্থের সঠিক ব্যবহারের অভাবে ইতিমধ্যে একাধিক নদী ও খাল নৌযান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন কয়েকটি নদী ও খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় জনসাধারন বর্তমানে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
উপজেলার প্রধান দুই নদী ‘তেঁতুলিয়া ও লোহালিয়া’র অধিকাংশ স্থানে ডুবো চর জেগে ওঠায় ঢাকা ও বরিশালগামী যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই দুই নদীর কোথাও না কোথাও লঞ্চ কিংবা মালবাহী কার্গো ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থাকে। এক সময়ের উত্তাল ‘আলোকি নদী’ এখন পরিণত হয়েছে মরা খালে। এ নদী দিয়ে কয়েক বছর আগেও যাতায়াত করতো সুবিশাল যাত্রীবাহী লঞ্চ ও মালবোঝাই কার্গো। বর্তমানে ‘আলোকি নদী’ দিয়ে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারও চলতে পারছে না।‘আলোকি নদী’ ভরাট হয়ে যাওয়ায় কালিশুরী, কেশবপুর, সূর্যমনি ও মদনপুরা ইউনিয়ন সহ উত্তর বাউফলের হাজার হাজার মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
 বগা বাউফল কালাইয়া প্রধান খালটি ব্রীজ নির্মান মাঝে মাঝে বাধ দিয়ে শম্ভুক গতিতে কাজ চলছে। বন্ধ রয়েছে  নৌ পথ যোগাযোগ ব্যবস্থা। কবে নাগান ব্রীজ নির্মান কাজ  শেষ হবে তার  কোনো হদিস নেই।
 উপজেলার প্রসিদ্ধ বাণিজ্যকেন্দ্র কালাইয়া হাটের খালটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ছাড়া কোন নৌযান প্রবেশ করতে পারছে না। দাশপাড়া ইউনিয়নের ‘ইলিশার খাল’ পুরোপুরিই মরে গেছে। বর্ষা মৌসুমে ‘ইলিশার খাল’ দিয়ে পানি নামতে না পাড়ায় ওই ইউনিয়নের একাধিক গ্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। একই ইউনিয়নের ‘মহিষাধি বদ্ধ খাল’ পরিস্কারের অভাবে ক্রমেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নাজিরপুর ইউনিয়নের চরমিয়াজান ‘কাটাভাড়ানি খাল’ মরে যাওয়ায় চরবাসীরা তাদের উৎপাদিত ফসল, সার ও বীজ সহজে বহন করতে পারছেন না। ওই খালটি ভরাট হয়ে যাওয়ার কারনে রোগাক্রান্ত চরবাসীরাও মূল ভূখন্ডের চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।‘বগা-বাউফল-নুরাইনপুর খাল’ দিয়ে আগে লঞ্চ চলাচল করতো এখন নৌকা চলতেও সমস্যা হচ্ছে।‘কনকদিয়া-বগা খাল’ নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় ব্যবসায়ী সহ সংশ্লিস্ট এলাকার চাকুরিজীবিদের লঞ্চযোগে যাতায়াত করতে ভোগান্তির পোহাতে হচ্ছে। নদী খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় শুধু যাতায়াত সমস্যাই নয়, মাছ সহ জলজ প্রাণীদের জন্য অশনি সংকেত। নাব্য হ্রাস ও বয়া-বিকন বাতির অভাবে দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে দক্ষিনাঞ্চলের নৌপথ।ঢাকা-পটুয়াখালী-বাউফল-কালাইয়া-বগা রুটে চলাচলকালী বড় নৌযানগুলোর পাশাপাশি বাউফল অভ্যন্তরীণ নৌরুটগুলোতেও লঞ্চ চলাচলে প্রায়ই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
এদিকে প্রকল্পের নামে সরকারি টাকা আতœসাৎ করার উদ্যোশা খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যে উদ্যোশে খাল খনন করা হচ্ছে তা  অর্জন হবে না বলে অনেকেই একমত পোষন করেছে। ফলে এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে অভ্যন্তরীন বেশ কয়েকটি রুট। জানা গেছে, নদীর নাব্য কমে যাওয়ায় ও পটুয়াখালী-বাউফল-কালাইয়া-বগা রুটে নতুন নতুন ডুবোচর জেগে ওঠায় ক্রমেই হুমকির মুখে পড়ছে এ অঞ্চলের নৌরুটে। কিন্তু সে হিসেবে বর্ষা বিকন বাতি না থাকায় বিপাকে পড়ছেন লঞ্চ চালকরা। এ ছাড়া নদী ভাঙনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আগের স্থাপন করা বিকন বাতিগুলো। ফলে প্রায়ই ডুবোচরে আটকা পড়ছে লঞ্চগুলো। ঢাকা-পটুয়াখালী-বাউফল-কালাইয়া নৌরুটের তেতুঁলিয়া ও লোহালিয়া নদীর  নাব্য হ্রাস পাচ্ছে ।